প্রস্তুত নির্বাচনি ট্রেন: জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ভোট

News Depend Desk

প্রতিনিধিঃ ডেস্ক রিপোর্ট

১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১২:১৩ মিনিট


পোস্ট ফটো

প্রস্তুত নির্বাচনি ট্রেন। বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছানোর আনুষ্ঠানিক যাত্রার ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি এ ট্রেনে চড়ার জন্য আরও প্রায় দুই সপ্তাহের মতো সময় হাতে পাবে। বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন ভোট আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সাংবিধানিক সংস্থাটির প্রধান কাজী হাবিবুল আউয়াল। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারিত হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে ৬-৭ জানুয়ারিকে ঘিরেই জোরালো আলোচনা রয়েছে।

শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে শর্তহীন সংলাপ অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলকে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠির দেওয়ার পরপরই তফসিলের বার্তা রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলেছে, ওই চিঠি নিয়ে তাদের কোনও ‘মাথাব্যথা’ নেই। তারা সাংবিধানিক দায়িত্ব থেকেই ভোটের পথে এগোচ্ছে।
বুধবার তফসিল ঘোষণা হলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আরও ১০-১২ দিন সময় পাবে। তফসিলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য সাধারণত ১০-১২ দিন সময় দেওয়া হয়ে থাকে। অবশ্য এর আগে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের কোন নেতার সইয়ে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে, তা লিখিতভাবে জানাতে হবে।
সংবিধান অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ৯০ দিনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কাজী হাবিবুল আউয়াল তার প্রায় সব কাজই গুছিয়ে এনেছেন। রেওয়াজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে গত ৯ নভেম্বর সাক্ষাৎ করে সিইসি তার নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি অবহিত করেছেন। সাক্ষাতের পর সিইসি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের ওপর যে (নির্বাচন অনুষ্ঠানের) সাংবিধানিকভাবে দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে, বাধ্যবাধকতা— সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বদ্ধপরিকর।’ পরদিন এক অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে পুরো দেশ মাতোয়ারা হয়ে আছে। পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিদিন বক্তব্য হচ্ছে। একটা ডাইমেনশনও পেয়ে গেছে।’

নির্বাচন কমিশন আগেই জানিয়েছে, নভেম্বরের প্রথমার্ধে তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। জানুয়ারির প্রথম দিকে তারা ভোটের তারিখ নির্ধারণ করবে। সে হিসাবে প্রথমার্ধের শেষ দিন ১৫ নভেম্বরই (বুধবার) তফসিল ঘোষণা হতে যাচ্ছে। তফসিলের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত রয়েছে ইসি সচিবালয়। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা অফিস করেছেন। তারা সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকও করেছেন বলে জানা গেছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বিকাল ৫টায় কমিশনের সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করবেন। এর আগে বুধবার সকালে তফসিল সংক্রান্ত বিস্তারিত বিষয়ে গণমাধ্যমকে ইসি সচিব ও কমিশনের মুখপাত্র মো. জাহাংগীর আলম অবহিত করবেন বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর রেওয়াজ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা করেন। এবারও তা অনুসরণ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য বার টেলিভিশনে সিইসির রেকর্ড করা ভাষণ সম্প্রচার করা হলেও এবার সরাসরি ভাষণের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। ইতোমধ্যে ভাষণের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে সংলাপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠির বিষয়ে কনসার্ন কিনা, বা এই চিঠি তফসিলের প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘অবশ্যই না। কোনও প্রভাব পড়বে না।’

নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, ‘প্রথমে কথা হচ্ছে সংলাপের চিঠি কিনা, এ বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়। কমিশনের কাছে কিছুই আসেনি। কমিশন তার নিজস্ব গতিতে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার আলোকে যেভাবে রোডম্যাপ হয়েছিল, সেভাবে অগ্রসর হচ্ছে।’
এদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সরকারের পদত্যাগ ইস্যুতে বিরোধী দলগুলো অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকলেও সরকারি দল আওয়ামী লীগের মধ্যে নির্বাচনি আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ইসির তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের মিছিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলটির কেন্দ্র থেকে। মঙ্গলবার দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নির্বাচনি ডামাডোলের মধ্যে দেশের জনগণের মধ্যে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে দলটির প্রধান ও দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত কয়েকদিন ধরে উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনের পাশাপাশি তিনি দলীয় আয়োজনে জনসভায় বক্তব্য দিয়েছেন। এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আবারও নৌকায় ভোট চেয়েছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি ৩ লাখ টাকার অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯ হাজার ৯৯৫টি অবকাঠামো নির্মাণ সমাপ্ত কাজের উদ্বোধন এবং ৪৬টি অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আপাতত উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনী কর্মসূচি শেষ করেছেন। নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পরে সরকার কোনও উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করতে পারবে না। প্রতীক বরাদ্দের আগে দলের পক্ষে এ সময় ভোট চাওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা সিলেটে শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করবে বলে আগেই জানিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটার তালিকা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে ইসি। দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটার ৮৫২। সারা দেশে ভোটকেন্দ্রের খসড়াও প্রস্তুত করা আছে। বিধান অনুযায়ী তফসিলের পর ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হবে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মার্কিং সিলসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সিল ছোট-বড় চটের বস্তা ও নির্বাচনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের বেশির ভাগ ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুবিধা সংবলিত এবং প্রার্থী, ভোটারদের জন্য নানা ধরনের সুবিধাযুক্ত দুটি অ্যাপস উদ্বোধন করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর কখন কোন কাজটি করা হবে, তাও চূড়ান্ত করা আছে। ভোটার তালিকার সিডি, মনোনয়ন ফরম ও নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়াল (নির্দেশিকা) ছাপানোর সম্পন্ন হয়েছে।
প্রশিক্ষক হিসেবে যারা প্রশিক্ষণ দেবেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি কর্মকর্তা (প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা) নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ।

Link copied