বৃষ্টির সময় রাসুল (সা.) যেসব আমল করতেন

News Depend Desk

প্রতিনিধিঃ ডেস্ক রিপোর্ট

১৩ আগস্ট ২০২৩ ১২:০৫ মিনিট


পোস্ট ফটো

রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আজ ভোর থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। মধ্যরাতে কিছুটা বিরতি দিলেও ভোর থেকেই রাজধানীতে যেন আকাশ ভেঙে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। শহরের কোনো কোনো জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে মুষলধারে। রাজধানীতে সকাল থেকে এই বৃষ্টি ব্যাহত করছে সাধারণ জীবনযাপন। তবে এই বৃষ্টি  আল্লাহ তাআলার অশেষ নেয়ামত।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তার এই মহা নিয়ামতের ব্যাপারে বলেন, ‘আর তিনিই সে সত্তা, যিনি তাঁর (রহমত) বৃষ্টির আগে বায়ু প্রবাহিত করেন সুসংবাদ হিসেবে, অবশেষে যখন সেটা ভারী মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি সেটাকে মৃত জনপদের দিকে চালিয়ে দিই, অতঃপর আমি তা দ্বারা বৃষ্টি বর্ষণ করি, তারপর তা দিয়ে সব রকমের ফল উৎপাদন করি। এভাবেই আমরা মৃতদের বের করব, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৭)

বৃষ্টির সময় বান্দার সব আমল ও দোয়া কবুল হয়। এ সময় সবাই অজু করে নামাজ পড়ে দোয়া ও আমল করবেন। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি সম্পর্কে উদ্ধৃত করেছেন। বৃষ্টি হলে মানুষের মন প্রফুল্ল হয়। আল্লাহর রহমতে প্রকৃতি পায় স্বস্তি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টির সময় কিছু আমল করতেন। 

১. বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা: বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা রহমতের ধারা হয়ে জমিনে বর্ষিত হয়। তাই সুন্নত হলো বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে নিজেদের পরিধেয় বস্ত্রাংশ মেলে ধরা। হাদিসে পাকে এসেছে-হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, 'আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে থাকাকালে একবার বৃষ্টি নামলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাঁর পরিধেয় বস্ত্র প্রসারিত করলেন, যাতে পানি তাকে স্পর্শ করতে পারে। আমরা বললাম, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, কারণ তা তার রবের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।' (মুসলিম ৮৯৮)।

২. বৃষ্টির দোয়া পড়া: রহমতের বৃষ্টি দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। হাদিসে পাকে এসেছে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃষ্টি হতে দেখলে বলতেন- اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا উচ্চারণ :‘ আল্লাহুম্মা সাইয়্যেবান নাফিআ।' অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুষলধারায় যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারি হয়।' (বুখারি ১০৩২)

আরও পড়ুন: মসুর ডালের কাবাব তৈরির রেসিপি

৩. বৃষ্টি চলাকালে দোয়া করা: বৃষ্টি চলমান সময়ে দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময়টি দোয়ার জন্য লুফে নেওয়া সুন্নত। হাদিসে পাকে এসেছে-হজরত সাহল বিন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না কিংবা (তিনি বলেছেন), খুব কমই ফেরত দেওয়া হয়- আজানের সময় দোয়া এবং রণাঙ্গণে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সময়ের দোয়া। অন্য বর্ণনা মতে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া। (আবু দাউদ ২৫৪০)

৪. বৃষ্টির পরে দোয়া পড়া: হজরত জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদাইবিয়ায় রাতে বৃষ্টির পর আমাদের নিয়ে নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে তিনি লোকজনের মুখোমুখি হলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বলেছেন, আমার বান্দাদের কেউ আমার প্রতি ঈমান নিয়ে আর কেউ কেউ আমাকে অস্বীকার করে প্রভাতে উপনীত হয়েছে। যে বলেছে, বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহি তথা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। ফলে সে আমার প্রতি ঈমান আর তারকার প্রতি কুফরি দেখিয়েছে। আর যে বলেছে, অমুক অমুক তারকার কারণে, সে আমার প্রতি অস্বীকারকারী এবং তারকার প্রতি ঈমানদার।' (বুখারি ৮৪৬; মুসলিম ১৫)

৫. অতি বৃষ্টি বন্ধে দোয়া পড়া: হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন জুমার দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবা দেওয়া অবস্থায় এক সাহাবি মসজিদে প্রবেশ করে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! জীবজন্তু মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে, পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন। তখনই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত সম্প্রসারিত করে দোয়া করলেন-اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল আঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন।’ (বুখারি ৯৩৩; মুসলিম ৮৯৭)

৬. বৃষ্টি দোয়া কবুলের সময়: বৃষ্টির সময় হচ্ছে দোয়া কবুলের সময়গুলোর একটি। তাই এ সময় আল্লাহর দরবারে নিজের চাহিদা অনুযায়ী বেশি বেশি দোয়া করা। বৃষ্টি চলমান সময়ে দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময় দোয়ার জন্য লুফে নেয়া সুন্নাত। হজরত সাহল বিন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না কিংবা (তিনি বলেছেন), খুব কমই ফেরত দেওয়া হয়। আজানের সময়ের দোয়া এবং রণাঙ্গণে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সময়ের দোয়া, অন্য বর্ণনা মতে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া।’ (আবু দাউদ ২৫৪০)।

আরও পড়ুন: বর্ষাতে সাদা স্নিকার্স পড়তে ভয়, ৫ উপায়ে থাকবে নতুনের মতো

৭. ঝোড়ো বাতাস বইতে দেখলে দোয়া: দমকা হওয়া বইতে দেখলে রাসূল (সা.) আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যেতেন এবং উদ্বিগ্ন হয়ে চলাফেরা করতেন। যখন বৃষ্টি হতো তখন তিনি খুশি হতেন। হযরত আয়িশা (রা:) থেকে বর্ণিত, আমি এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমার আশঙ্কা হয়, আমার উম্মাতের ওপর কোনো গজব আসে কি না। বৃষ্টি দেখলেই তিনি বলতেন, রাহমাতান অর্থাৎ এটি আল্লাহর রহমত। (হাদিস : ১৯৬৯)অন্য হাদিসে রয়েছে, আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আকাশে মেঘ দেখলে নফল ইবাদত ছেড়ে দিতেন। এমনকি সালাতে উপবিষ্ট অবস্থায়ও। অতঃপর তিনি দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরি ওয়া খাইরি মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’। অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বৃষ্টির উপকারী দিক কামনা করছি। আর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৯)।

৮. মেঘের গর্জন শুনে দোয়া : মেঘের শব্দ শুনলে দোয়া পড়া সুন্নত। আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) মেঘ ও বজ্রের আওয়াজ শুনলে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগাদাবিকা, ওয়া লা তুহলিকনা ওয়ালা তুহলিকনা বি আজাবিকা ওয়া আফিনা কাবলা জালিকা। অর্থাৎ হে আল্লাহ, আপনি আমাদের আপনার ক্রোধ দিয়ে হত্যা করবেন না। আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করবেন না এবং এর আগেই আমাদের নিরাপদে রাখুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪০৫)

৯. অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দোয়া করা: অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া করতে হবে। রাসুল (সা.) একবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দোয়া করেছিলেন- ‘আল্লাহুম্মা হাওয়াইলাইনা ওয়া আলাইনা’। অর্থ- হে আল্লাহ! আমাদের এখানে নয়, আশেপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করো। (সুনানে নাসায়ি : হাদিস : ১৫২৭)

১০. কল্যাণের প্রার্থনা : রাসুল (সা.) বৃষ্টির সময় কল্যাণের দোয়া করতেন। তিনি বৃষ্টিবাহী সব ধরনের আজাব ও অকল্যাণ থেকে মুক্তি চেয়ে উম্মাহর জন্য দোয়া করতেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বৃষ্টি দেখলে এই দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিয়া’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উপকারী বৃষ্টি প্রার্থনা করছি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০৩২)

১১. আজাব থেকে মুক্তির দোয়া : অনেক সময় বৃষ্টির মাধ্যমে আজাব ঘনিয়ে আসে। অতিবৃষ্টির কারণে তৈরি হয় ভয়াবহ বন্যা বা ভীতিকর পরিবেশ। অতীতে নুহ (আ.)-এর জাতি ভয়াবহ বন্যায় ধ্বংস হয়েছিল। তা ছাড়া হুদ (আ.)-এর সম্প্রদায় আদ গোত্রও প্রচণ্ড বাতাসে ধ্বংস হয়েছিল। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তারা উপত্যকার প্রান্তে মেঘ দেখল তখন বলতে লাগল, এই মেঘ আমাদের বৃষ্টি দেবে, (তখন বলা হলো) বরং এটা  তাই, যা তোমরা তাড়াহুড়া করতে, এই ঝোড়ো বাতাসে মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।’ (সুরা : আহকাফ, আয়াত : ২৪)

মহান আল্লাহ সবাইকে আমল করার তাওফিক দিন। (আমিন)

এনডি/এফএইচ

Link copied