কিছু টিভি চ্যানেল সিলেকটিভ ফুটেজ দিয়ে শাকিবের ডিমান্ড তৈরির চেষ্টা করেছে
০৬ জুলাই ২০২৩ ০২:৫৫ মিনিট

সুড়ংগ ও প্রিয়তমা সিনেমাকে ঘিরে বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ড্রাসটিতে একটা সুবাতাস বইছে।।দর্শকরাও পছন্দ করেছে এই দুটি সিনেমা।। শো গুলো হাউজফুল যাচ্ছে। ইউটিউব, টিভি নানা মাধ্যমে দর্শকরা তাদের উচ্ছ্বাস প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। তবে এই দুটি সিনেমা ঘিরে একটা সূক্ষ রাজনীতি নোটিশ করলাম,যেটা খুব ইন্টারেস্টিং। দুটো সিনেমার একটাও আমি দেখিনি।।
তবে মুক্তির আগে থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিদিন ই সংবাদপত্র থেকে শুরু করে টিভি, ও নানা মাধ্যমে এই দুই সিনেমা সহ ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্যান্য সিনেমা নিয়ে দর্শক থেকে শুরু করে নানা জনের মতামত খুব মনযোগ সহকারে লক্ষ্য করে একটা সুক্ষ্ম রাজনীতি নোটিশ করলাম। আফরান নিশো ছোট পর্দা ও ওটিটিতে পরীক্ষিত ও তুমুল জনপ্রিয়। কিন্ত বড় পর্দার যে গ্রেঞ্জার, লার্জার দ্যান লাইফ এপিয়ারেন্স, ড্রামাটিক শিফট এইগুলোতে নিশো কেমন করে সেটা দেখার ছিলো।।সম্ভবত ভালোই করেছে সুড়ংগতে যা নানা মাধ্যমে অনেকের প্রতিক্রিয়ায় বুঝা যাচ্ছিলো।
বিপরীতে শাকিব খান বাংলা সিনেমার লাস্ট রিমেইনিং সুপারস্টার। তার অভিনয়, বডি ল্যাংগুয়েজ, গল্প সিলেকশন নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন থাকলেও তার লুক, ফিটনেস এর কারণে এক বিশাল ফ্যান বেস উনি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এতদিন ধারণা করা হতো শাকিব মুলত শ্রমিক শ্রেণি, গ্রামের সাধারণ দর্শকের কাছেই জনপ্রিয়।
কিন্ত ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রিয়তমা ছবি দিয়ে মধ্যবিত্ত দর্শকরাও শাকিবকে ভালোই গ্রহন করেছে বলে মনে হয়। রাজনীতিটা ঠিক এখানেই।। শাকিব খান একা মুভী টেনে নেয়ার ক্ষমতা রাখে। অন্তত তার ফ্যানদের রুচী অনুযায়ী যেধরনের মুভী তৈরি করা হয় সেখানে শাকিবকেই সর্বেসর্বা হিসাবে দেখানো হয়। কিন্ত বাংলাদেশে গত এক দশকে যে পরিমাণ সিনেমা হল ও অন্যান্য প্রদর্শনের সুযোগ কমেছে তাতে শুধু একটা শ্রেনী ও গ্রামের দর্শকদের উপর ভিত্তি করে ঈদের বড় বাজেটের সিনেমাকে লাভজনক করানো কঠিন।
তাই প্রয়োজন ছিলো শাকিবের সিনেমার টার্গেট অডিয়েন্সের হরাইজনকে বড় করা। এবং আমার পর্যবেক্ষন বলে প্রিয়তমা সেইক্ষেত্রে সফল। কিন্ত কিভাবে সফল হলো? এই সফলতার পেছনেই সূক্ষ রাজনীতি আছে। ধারণা করা হয় নিশো শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয় তাই তার সিনেমা শহর কেন্দ্রিক মাল্টিপ্লেক্সে ভালো ব্যবসা করতে পারে। এবং করেছেও তাই।
কিন্ত সিংগেল স্ক্রিনে শাকিবের দাপট থাকবে। সেটাও হয়েছে।।কিন্ত এখানে ক্যাচ অন্য জায়গায়। মাল্টিপ্লেক্সে যেখানে একইসাথে ৬-৮ টা শো স্ক্রিনিং হয় তাতে দেশের যে ৬-৮ টা মাল্টিপ্লেক্স আছে সেগুলোই প্রায় ৪০ টা সিংগেল স্ক্রিনের সমান দর্শককে এট এ টাইম একোমোডেট করতে পারে। তার উপর টিকেটের হাই প্রাইস ও অন্যান্য খরচ হিসাব করলে মাল্টিপ্লেক্সে দর্শকরা তুলনামুলক বেশি খরচ করে। এখানে শাকিব খান কিছুটা পিছিয়ে পড়ে যাওয়ার কথা তার দর্শক, টার্গেট গ্রুপদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান ভেদে। তাই প্রথম থেকেই শাকিবের মুভীর পরিচালক, প্রযোজক সহ অন্যান্য কুশলীরা সচেষ্ট ছিলো এই গ্যাপকে কিভাবে এড্রেস করা যায়। এবং তখনি সফট পাওয়ার এর ব্যবহার দেখা গেছে।
এইবার একটু অন্য প্রসংগে আসি। শাকিব খানের সিনেমার প্রযোজক কিংবা অর্থলগ্নীকারী হচ্ছে আরশাদ আদনান। উনি সিনেমা প্রযোজনায় জড়িত থাকলেও এইবারের মত হাইলাইট কখনো হয়নি উনার কোন কাজ।
উনার একটা আলাদা পরিচয় হচ্ছে উনি আমাদের মাননীয় রাষ্ট্রপতির সন্তান। অন্যদিকে সুড়ংগ সিনেমার অন্যতম প্রযোজক প্রথম আলো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান চরকি। এইবার সুক্ষ্ম রাজনীতির বিষয়ে আসি।।ব্যক্তি জীবন নিয়ে শাকিব খান বেশ কিছুদিন ধরেই সমালোচনার মুখে আছেন। এবং শাকিবের যে ফ্যান বেইজ মুলত নিম্নবিত্ত ও গ্রামের দর্শক তারা যে কনজারভেটিভ ভ্যালু লালন করে তাতে শাকিবের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কথা এবং সেটার প্রভাব সিনেমাতেও পড়ার কথা।
এই ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য শাকিব খানের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করা প্রয়োজন ছিলো। এবং তাতে কিছু মিডিয়া গত কয়েকমাস ধরে চমৎকার ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে প্রিয়তমা মুভীর ঘোষনা হওয়ার পর থেকেই সময় টিভি, এটিএন বাংলা, একাত্তর, নিউজ ২৪ সহ আওয়ামী পন্থী হিসাবে পরিচিত মিডিয়াগুলো বুবলীকে বারবার প্ররোচিত করেছে, তাকে মিডিয়ায় নানা প্রশ্ন করে বিব্রতকর উত্তর দিতে প্ররোচিত করেছে বিপরীতে শাকিব খান মিডিয়ায় সরাসরি আসে নাই। এমনকি প্রিয়তমা ছবির প্রচারণার শাকিব খান ছিলো না।
এই না থাকাটা টেকটিকাল ডিসিশান যেটা প্রযোজক ও উনার শুভাকাংখীদের পরামর্শেই সম্ভবত। এমনকি সিনেমার পরিচালক হিমেল আশরাফ ও হয়তো এই ব্যাপারে প্রথম দিকে দ্বিধান্বিত ছিলো। কারণ মিডিয়ার সামনে আসলে শাকিবকে সাংবাদিকরা তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করতোই। তাতে যেকোন বেফাস মন্তব্যে তার সিনেমার উপর বিরুপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। সিনেমার মুক্তির পর নির্দিষ্ট কিছু টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র যেভাবে দর্শক প্রতিক্রিয়ার নামে সিলেকটিভ ফুটেজ দিয়ে ম্যানুফ্যাকচারড ডিমান্ড তৈরির চেষ্টা করেছে শাকিবের সিনেমাকে নিয়ে তা একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়। এইধরনের টিভিগুলো বিপরীতে সুড়ংগে অশ্লিলতা, নারীকে খাটো করা হয়েছে, এইসব বিতর্ক তুলেছে। এবং এইগুলো জিইয়ে রাখছে।
তাদের উদ্দেশ্য একটু সুক্ষ্ম হলেও ক্লিয়ার। আমি অতি সরকার সমর্থক কয়েকটি পত্রিকায় সুড়ংগের রিভিউ পড়লাম। সেইসব রিভিউ পড়লে যেকারো সুড়ংগ দেখার আগ্রহ কমে যাবে।।রিভিউ লেখার স্টাইলেই বুঝা যায় এটা একটা প্রোপাগান্ডার অংশ যাতে রাইভাল মুভী বেটার ক্যাশ করতে পারে। লক্ষ্য প্লেইন এন্ড সিম্পল। আদনান সাহেবের ইনভেস্টমেন্টকে সিকিউর করা। এমনকি আমাদের এক মন্ত্রি পর্যন্ত সেই প্রিয়তমার জন্য মিডিয়ায় স্বভাব বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
এটা অনেকগুলো চলমান সিনেমার মধ্যে শুধু একটা সিনেমা নিয়ে এইভাবে রিয়েকশন দেয়ার অর্থ উনার ফ্যান ফলোয়ারদের কাছে বার্তা পৌছে দেয়া যে- আপনারা মুভিটা দেখুন। যদিও এটাকে সিটিং মিনিস্টার হিসাবে অনৈতিক মনে হয়। বিপরীতে প্রথম আলো ও তাদের বন্ধু মিডিয়াগুলো যেভাবে সুড়ংগকে কাভারেজ দিচ্ছে, ঘন্টায় ঘন্টায় দর্শক প্রতিক্রিয়াকে ব্রডকাস্ট করছে, রিভিউ ছাপাচ্ছে সেটাও তাদের নিজের স্বার্থ রক্ষা।।এখানে প্রিয়তমা এত বড় সুপার হিট হওয়ার পরে।
বাতেন মোহাম্মদ-এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত