দুধ-আনারস একসঙ্গে খেলে কী হয়?

News Depend Desk

প্রতিনিধিঃ ডেস্ক রিপোর্ট

০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৩:০৭ মিনিট


পোস্ট ফটো

দুধ ও আনারস একসঙ্গে খাবেন না। এ কথাটি আমরা সব সময় শুনে থাকি। দুধ-আনারস একসঙ্গে খেলে নাকি হতে পারে বিপত্তি। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি দুধ ও আনারস একসঙ্গে খেলে তা বিষ হয়ে যায়। তবে কথাটি কি সত্যি। কী হতে পারে, তা কি আপনার জানা আছে? 

পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে সারাবিশ্বেই দুধ এক বহুল পরিচিত নাম। বলা হয়ে থাকে, দুধ একটি পরিপূরক খাবার। বিশেষত গরুর দুধ বহু বছর ধরেই অনেক মানুষের জন্য একটি দৈনিক প্রধান খাদ্য। দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধই একমাত্র তরলজাতীয় খাবার, যেখানে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। প্রোটিন, ফ্যাট আর কার্বোহাইড্রেটের দারুণ এক ‘মিক্সচার’ হলো দুধ। তাই যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য দুধ উপকারী।

 নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফল হিসেবে সারাবিশ্বেই জনপ্রিয় আনারস। ফল ছাড়াও রান্না করে, সালাদ হিসেবে, জুস হিসেবেও আনারস খেতে পছন্দ করেন অনেকে। আনারসে ভরপুর ভিটামিন সি। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাসের দারুণ এক উৎস। দেশেই প্রচুর চাষ হয় বলে গ্রাম থেকে শহর—সব জায়গায়ই আনারস সহজলভ্য।

তবে এই দুই খাবার একসঙ্গে পাকস্থলিতে গেলে কি হয়? বিজ্ঞান এ বিষয়ে কী বলে? বারডেমের সাবেক প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো বলেন, ‘দুধ আর আনারস একসঙ্গে খেলে মানুষের মৃত্যু হয়—কথাটির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। এটি নিতান্তই প্রচলিত কুসংস্কার।’

যুক্তি হিসেবে তিনি কাস্টার্ডের কথা বললেন। এতে অন্যান্য ফলের সঙ্গে আনারস তো থাকেই, সঙ্গে থাকে দুধ। আবার আইসক্রিম কিংবা মিল্কশেকেও আনারসের সঙ্গে দুধ ব্যবহার করা হয় অহরহ। এসব খাবার খেলে মৃত্যু তো দূরে থাক, ছোটখাটো সমস্যার অভিযোগও কেউ করেছেন বলে শোনা যায় না।

এ বিষয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘গরুর দুধের সাথে আনারস খেলে কি মানুষ মারা যায়? এমন প্রশ্ন অনেক বার শুনলেও এ নিয়ে কথা বলার তেমন আগ্রহ জন্মায়নি। সম্প্রতি একটি ভিডিও দেখলাম, এক ভদ্রলোক ভিডিও তৈরি করে দেখাচ্ছেন যে, এক গ্লাস দুধের মধ্যে একটি আনারসের জুস ঢেলে দিলে কেমন বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। ধারা বর্ণনা এতটাই ভয়ংকর লেগেছে যে, মনে হচ্ছিল এটি খাওয়ার সাথে সাথে মানুষ মারা যাবে।’

ডা. মোস্তফা বলেন, ‘আসলে আনারস আর গরুর দুধ একত্রে খেলে কোনো সমস্যাই হয় না। আনারসে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে বলে খেতে কিছুটা টক লাগে। আর আনারসে ব্রোমেলেইন নামে একটি এনজাইম থাকে, যা দুধের ক্যাসিন নামক প্রোটিন ভেঙে ছানা বা দইয়ে পরিণত করতে পারে। এ ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা হয় না।’

তিনি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ায় চিজ বানাতে আনারস আর গরুর দুধ ব্যবহার করা হয়। সেখানে এটি খেয়ে কেউ মারা গেছে বলে এখনো শোনা যায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নষ্ট হয়ে যাওয়া দুধ আর আনারস একত্রে খেলে সেটি ক্ষতিকর হয়। কারণ নষ্ট দুধে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা আনারসের ব্রোমেলেইনের সাহায্য নিয়ে দুধকে বিষাক্ত করে ফেলতে পারে। আর নষ্ট দুধ কোনো সুস্থ মানুষ খায় বলে আমার মনে হয় না।’

ডা. মোস্তফা কামাল সবশেষে বলেন, ‘আনারস আর দুধ একত্র খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অ্যাসিডিটি বা পেটে একটু ব্যথা হতে পারে।’

তাহলে মৃত্যুর ভুল ধারণাটি কীভাবে এল? প্রশ্নটির উত্তরে পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো শোনালেন এক লোককাহিনি। আনারস সাধারণত ঝোপঝাড়ের মধ্যেই হয়। আর ঝোপ মানেই সাপের আনাগোনা। প্রচলিত আছে, একবার এক বিষধর সাপ আনারসের ঝোপে ঘাপটি মেরে ছিল। কোনোভাবে সেই সাপ আনারসের গায়ে বিষ ঢেলে দিয়েছিল। এরপর সেই বিষাক্ত আনারস খেয়ে ফেলেন এক ব্যক্তি। এর পরপরই চুমুক দেন দুধের গ্লাসে। ব্যস, খানিক পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ফলে লোকজন ধরে নেয়, আনারসের পর দুধ পান করায় তিনি প্রাণ খুইয়েছেন এবং তারপর থেকেই ছড়িয়ে পড়ে সেই কুসংস্কার—আনারস আর দুধ একসঙ্গে খেয়েছেন তো মরেছেন!

Link copied