ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে পান করুন ১৫ পানীয়

News Depend Desk

প্রতিনিধিঃ ডেস্ক রিপোর্ট

১২ আগস্ট ২০২৩ ০১:৫৫ মিনিট


পোস্ট ফটো

ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পানীয়েরও পরিবর্তন হতে থাকে। গ্রীষ্ম মানে ঠান্ডা পানীয়। আবার বর্ষা এবং শীতে আমরা উষ্ণতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী পানীয়ের সন্ধান করি। আপনি যদি ত্বক ভালো রাখতে চান তবে অবশ্যই প্রতিদিনের খাবারের দিকে নজর রাখবেন। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক মানেই সুন্দর ত্বক। সু্স্থ, সুন্দর ত্বক পেতে সুঅভ্যাস তৈরি করা জরুরি। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান করা তেমনই এক সুঅভ্যাস যা শরীর থেকে সব বিপাকীয় বর্জ্য পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে রাখে সুন্দর।

অনেকে আবার ত্বকের যত্নে প্রসাধনী ব্যবহার করি। তবে অনেকেরই অজানা রয়েছে যে ত্বকের যত্নে প্রসাধনীর চেয়েও বেশি কার্যকর হচ্ছে খাবার। পুষ্টিকর খাবার ত্বককে উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পুষ্টি-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন ভারতের আয়না স্কিন ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা ডা. সিমাল সোইন এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, সবুজ ও গাড়ো রঙের সবজি, টক-জাতীয় খাবার, পরিষ্কার পানীয়, প্রোটিন ও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক ভালো রাখে।

ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল ত্বকের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, সর্দিকাশির মতো ফ্লুও প্রতিরোধ করে। কিছু ফল ও সবুজ শাকসবজি থেকে এই ভিটামিন পাওয়া যাবে।ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত ভিটামিন সি রাখতে হবে।

প্রতিদিন কী পানীয় পান করছেন তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে, আপনার ত্বক কেমন থাকবে। প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ পানীয় পান করলে তা হাইড্রেটেড থাকার একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে। জেনে নিন ত্বক ভালো রাখতে কোন কোন পানীয় পান করবেন-

১) গ্রিন টি: গ্রিন টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি ব্রণ দূর করার পাশাপাশি বলিরেখা থেকে দূরে রাখতেও কাজ করে। যে কারণে গ্রিন টি পান করলে ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। আপনি যদি তারুণ্য ভরা কোমল ত্বক চান, তাহলে এক কাপ গ্রিন টি দিয়ে আপনার দিন শুরু করুন। এই চা শরীরের নানাভাবে উপকার করে।

২) ভেষজ চা: পেপারমিন্ট চা, ড্যান্ডেলিয়ন চা, গোলাপ চা ইত্যাদি ভেষজ চা আপনার ত্বকের জন্য দারুণ। এতে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আপনাকে উজ্জ্বল ত্বক পেতে সাহায্য করে। এগুলো শরীরকে ডিটক্সিফাই করতেও সাহায্য করে, যা ত্বকের স্বাস্থ্যকে অনুকূলভাবে প্রভাবিত করে।

৩) মসলা পানি: বেশ কয়েকটি মসলা পানিতে ফুটিয়ে মসলা পানি তৈরি করতে পারেন। এই পানীয় আপনার ত্বকের জন্য বিস্ময়করভাবে কাজ করবে। এর মধ্যে একটি হলো মৌরি দিয়ে ফুটানো পানি। এছাড়া হলুদ, মেথি, দারুচিনি, জিরা, ইত্যাদিও ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ত্বকের স্বাস্থ্যে অবদান রাখতে পারে। এসব মসলা শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। সেইসঙ্গে হজম শক্তির ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।

৪) হলুদ দুধ: শুধু হলুদ মিশ্রিত পানি নয়, হলুদ দুধও একটি দুর্দান্ত পানীয় যা আপনি ডায়েটে যোগ করতে পারেন। এই আশ্চর্য মসলা প্রাচীনকাল থেকেই নিরাময় বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত। আমাদের দেশে হলুদ দুধ একটি জনপ্রিয় পানীয়, এটি ত্বকের যত্নেও সাহায্য করে। উচ্চ-প্রোটিন যুক্ত দুধ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হলুদ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদানের সংমিশ্রণ একে পুষ্টিকর পানীয় করে তোলে।

৫) মসলা দুধ: আরেকটি দুধযুক্ত পানীয় হলো মসলা দুধ। এই পানীয়তে শুধু মসলা নয়, বাদামও ব্যবহার করতে পারেন। এই পানীয়র জন্য প্রিমিক্স আগে থেকেই তৈরি করে রাখতে পারেন। এই প্রিমিক্স বেশ কিছুদিন সংরক্ষণও করতে পারেন।

৬) কমলা ও আদার মিশ্রিত পানীয় : কমলাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম কমলাতে দৈনিক চাহিদার ৬৪ ভাগই ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এই কমলা আর আদার মিশ্রণে তৈরি পানীয় ত্বকের জন্য উপকারী।

৭) মিন্ট কিউই লেমন জুস : কিউই এবং লেমন দুটোই ভিটামিন সি ভরপুর। লেমনের এই পানীয় শরীর ঠান্ডা রাখে। এতে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য প্রচুর পরিমাণ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

৮) আমের স্যুপ : এটি সাধারণ আমের জুসের মতো নয়। এটি তৈরিতে মাংসল আম, পাকা টমেটোর প্রয়োজন পড়ে। এই স্যুপ গরমে শরীর জুড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে।

৯) আনারসের পান্না : ভিটামিন সি এর আরেকটি ভালো উৎস আনারস। দৈনিক চাহিদার ৭৯ ভাগ ভিটামিন সি এই ফল পূরণ করতে পারে। আনারসের পান্না কাচা আমের পান্নার মতোই সুস্বাদু। জিরার গুঁড়া ব্লাক সল্ট এবং চিনির মিশ্রণে তৈরি আনারসের পান্না এই উপমহাদেশে জনপ্রিয়।

১০) আপেল সিডার ভিনিগার: দিনের শুরুটা হোক এক গ্লাস গরম জলে বড় দুচামচ আপেল সিডার ভিনিগার দিয়ে। তবে এই জল খাওয়ার পর কিন্তু ৩০ মিনিট কিছুই খাওয়া চলবে না। বরং সেই সময়টা কাজে লাগান শরীরচর্চায়। এরপর অবশ্যই কিছু খাবেন। আপেল সিডার ভিনিগার আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কোলেস্টেরল, ব্লাডপ্রেসার, সুগার এসবও নিয়ন্ত্রণে রাখবে। মাত্র একমায় খেলে আপনি নিজেই হাতে নাতে ফল পাবেন।

১১) আমলকির জুস: আমলকিতে ভিটামিন সি থাকে একথা আমরা সবাই জানি। করোনা কালে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিদিন সকালে উঠে ভিটামিন সি খাওয়ার নিদান দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। খালি পেটে একগ্লাস পানিতে দুচামচ আমলকির রস মেশান। টকের তোয়াক্কা না করে খেয়ে নিন। প্রতিদিন খেতে পারলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তো বাড়বেই সেই সঙ্গে ভালো থাকবে ত্বক, চুল। অতিরিক্ত ফেসিয়াল কিংবা হেয়ার স্পায়ের প্রয়োজন পড়বে না।

১২) লেবু-মধুর পানি: এই মহামারিতে রাতারাতি হিরো হয়ে গিয়েছে লেবু আর মধু। হেন কোনও বাড়ি বোধহয় নেই যেখানে সকালে খালি পেটে গরমপানিতে পরিবারের সদস্যরা মধু-লেবু খান না। একরকম ওষুধের মতোই হয়ে গিয়েছে এই পানীয়। খালিপেটে এই পানিখেলে মেটাবলিজম রেট বাড়বে। এছাড়াও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে। হজমের ক্ষমতা বাড়বে। ওজন তো কমবেই। সেই সঙ্গে জারি থাকবে ডিটক্স প্রক্রিয়াও।

১৩) আমলকি-অ্যালোভেরা জুস: স্বাদের দিক দিয়ে একটা টক আর একটা তেতো। কিন্তু দুজনে যদি একসঙ্গে জুটি বাঁধে তাহলে আপনার শরীরে এক সপ্তাহেই দেখা দেবে ম্যাজিকের মতো পরিবর্তন। খালি পেটে পানির সঙ্গে ৩০ মিলি আমলকি আর অ্যালোভেরার জুস মিশিয়ে নিন। এরপর ৩০ মিনিট কিন্তু কিছু খাবেন না। একসপ্তাহেই কমবে হজমের সমস্যা। আর হজমের গন্ডোগোল মিটলেই শরীর থাকবে ফিট। আর প্রাকৃতিক ডিটক্সে ত্বকও থাকবে একদম ফিট।

১৪) চিয়া সিডস: ব্রেকফাস্টে ওটস অনেকেই খান। দুধ ওটস বা টকদই দিয়ে ওটস খেলে ওর সঙ্গে মিশিয়ে নিন সামান্য চিয়া সিডস। কিংবা ওটস-কলার স্মুদি বানালে তাতেও যোগ করতে পারেন। প্রতিদিন সকালে চিয়া সিডস খেতে পারলে শরীরের খুব ভালো ডিটক্সিফিকেশন হয়, এছাড়াও ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে। ভিটামিনের ঘাটতিও পূরণ হয়। যাঁদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে তাঁদের জন্য এই সিডস খুবই কার্যকরী।

১৫) করলার রস: ডায়াবিটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য করলার রস অত্যন্ত উপকারী। ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ করলা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।

Link copied